আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করেছে বিএনপির সমমনা দল ও জোট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তারা এর চেয়ে বেশি সময় দিতে নারাজ। এই ইস্যুতে দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে লিফলেট বিতরণ, মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। একইসঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন নেতারা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে সমমনা দল ও জোটগুলোর বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে মতবিনিময় করা হয়।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। এছাড়া সমমনা দলগুলোর মধ্যে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির নেতারা অংশ নেন।
বৈঠকের আলোচ্যসূচি
বৈঠকে “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার” পতনে একদফা দাবিতে অংশ নেওয়া দলগুলো বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য দল ও জোটের মতামত নিয়ে পরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।
বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রতিবাদ কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, জনগণের ভোগান্তি এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ধারাবাহিক বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানানো হবে।”
১২ দলীয় জোটের প্রধান এবং জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে কথা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।”
বৈঠকে উপস্থিত নেতারা
১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা জামাল হায়দার (জাতীয় পার্টি কাজী জাফর), শাহাদাত হোসেন সেলিম (বাংলাদেশ এলডিপি), সৈয়দ এহসানুল হুদা (বাংলাদেশ জাতীয় দল), ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম), নুরুল আমিন বেপারী (বিকল্পধারা বাংলাদেশ), রাশেদ প্রধান (জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি), লায়ন মোহাম্মদ ফারুক রহমান (লেবার পার্টি), শামসুদ্দিন পারভেজ (বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি), মাওলানা আব্দুল করিম (ইসলামী ঐক্যজোট), এডভোকেট আবুল কাশেম (ইসলামিক পার্টি), ফিরোজ মো. লিটন (প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল) এবং ইমরুল কায়েস (নয়া গণতান্ত্রিক পার্টি)।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃত্বে ছিলেন এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা
বৈঠকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। নেতারা বলেন, যে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন, তবে এটি যদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়, তাহলে তা জনগণ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে।
বৈঠকে নেতারা চলমান রাজনৈতিক পরিবেশে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে অটল থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।