দেশের অর্থ পাচার রোধে এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সংস্থার প্রধান নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক।

সম্প্রতি বিএফআইইউ প্রধান পদের জন্য প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১০ জন প্রার্থীর বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। এমনকি দেশের আলোচিত এস আলম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু কর্মকর্তার নামও প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছে। এতে করে অনিয়ম রোধ এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিতর্কিত প্রার্থীদের তালিকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এবং বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাসহ ১০ জন প্রার্থী এ পদের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো:

অভিযোগ ও বিতর্ক

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ অনুসারে, এই প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এস আলম গ্রুপসহ বিভিন্ন বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

জহুরুল হুদা:
জহুরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক থাকাকালীন এস আলম গ্রুপকে বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। অবসরের পর এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ট্রেনিং একাডেমিতে চাকরি পান তিনি। পরবর্তীতে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডে (এনবিএল) স্বতন্ত্র পরিচালক পদেও আসীন হন।

রফিকুল ইসলাম:
রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এস আলম গ্রুপকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দাপট দেখানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নজরুল ইসলাম:
নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এস আলম গ্রুপকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

আশিকুর রহমান:
আশিকুর রহমান এনসিসি ব্যাংকের ডিএমডি থাকা অবস্থায় দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগে চাকরি হারান। পরে তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) চিফ রেগুলেটরি অফিসার পদে নিয়োগ পান। কিন্তু নীতিমালা লঙ্ঘন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করায় সেখান থেকেও অপসারিত হন।

নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএফআইইউ প্রধান পদের জন্য প্রার্থীর অন্তত ২০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে আশিকুর রহমান এই যোগ্যতা পূরণ করেন না। তার নাম প্রাথমিক তালিকায় না থাকলেও শেষ মুহূর্তে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সাবেক ডেপুটি গভর্নরের সুপারিশে তিনি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।

আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ

আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিএফআইইউর মতো স্পর্শকাতর সংস্থার প্রধান হিসেবে একজন সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যদি বিতর্কিত এবং অনিয়মে জড়িত প্রার্থীদের মধ্য থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্য ব্যাহত হবে। বরং দেশের আর্থিক খাত নতুন করে অনিয়ম ও লুটপাটের শিকার হতে পারে।

সরকারকে আহ্বান

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের উচিত এ পদে এমন একজনকে নিয়োগ দেওয়া, যিনি সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন। পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।


আপডেট: বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আগামী দিনে এ নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নতুন মোড় আসতে পারে।

সংবাদ ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *