ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন শেষে নিয়মিত কাজ ও গবেষণায় ফিরতে চান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “আমার চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাকে জোর করে এ দায়িত্বে আনা হয়েছে। আমি আমার নিয়মিত কাজ করছিলাম, যা আমি উপভোগ করতাম। প্যারিসে থাকাকালীন আমাকে এই দায়িত্বে টেনে আনা হয়। তাই নির্বাচন শেষে আমি আমার পূর্ববর্তী কাজে ফিরে যেতে চাই। তরুণ প্রজন্মের জন্য যে আন্দোলন আমি সারা বিশ্বে গড়ে তুলেছি, তাতে মনোযোগ দিতে চাই।”
১৫ বছরের শাসনের অবসান
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকার দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নির্বাচনী সংস্কারে মনোযোগ দিয়েছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া বিজয় দিবসের ভাষণে ড. ইউনূস জানান, ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিক বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তরুণদের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের ঝুঁকি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না। আমাদের তরুণ প্রজন্ম ধর্মের প্রতি নিরপেক্ষ এবং নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই তরুণরা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব পরিবর্তনের সক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে, তরুণীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিন তরুণ এখন আমার ক্যাবিনেটে আছেন এবং তারা চমৎকার কাজ করছেন।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “তরুণদের স্বপ্ন পূরণে মনোযোগী হতে হবে। তাদের দক্ষতা ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে।”
বাংলাদেশ: ইকোনমিস্টের কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার
২০২৩ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে “কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার” খেতাব দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “ছাত্রদের নেতৃত্বে আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা হয়। তার শাসনামলে বিরোধী দমন, নির্বাচনী কারচুপি, এবং বিশাল অর্থ আত্মসাৎ ঘটেছে। কিন্তু এই আন্দোলন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের শক্তি ও সক্ষমতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এগিয়ে চলা
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংস্কারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন শুরুর আশা দেখাচ্ছে। নির্বাচনের পর তিনি তার গবেষণা এবং সামাজিক উদ্যোগে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য বাংলাদেশকে একটি নতুন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার বহন করে। তরুণদের সঙ্গে নিয়ে এই পথচলা বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।