অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের আইনি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন এ এফ হাসান আরিফ। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শোক আর শ্রদ্ধায় তাকে বিদায় জানান আইনজীবী, বিচারক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল-ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামালসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা

প্রধান বিচারপতির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “হাসান আরিফের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারিয়েছে। তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা আইন পেশায় এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

ড. কামাল হোসেনের স্মৃতিচারণা

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, “হাসান আরিফ আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সব সময় ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে কাজ করেছেন।”

এক জীবন, বহুমুখী দায়িত্ব

১৯৪১ সালের ১০ জুলাই ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এ এফ হাসান আরিফ। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৬৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিন বছরের মাথায় পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত হন। দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা

২০০৮-০৯ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

জীবনের শেষ প্রহর

হাসান আরিফ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ধানমণ্ডির বায়তুল আমান মসজিদে।

তার মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলাদেশের আইন অঙ্গন হারালো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *